নিউজ ডেস্ক :
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বিতীয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। যা আগের প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়ের ১০ গুণেরও বেশি। এরআগে, ২০১৮ সালে প্রকল্পটি ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তখন একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়।
সোমবার (৭ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় কালুরঘাটসহ ২৪ হাজার ৪১২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরে বিকালে শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
উপদেষ্টা জানান, একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ সহায়তা থেকে ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এলেঙ্গা- হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণ প্রকল্প, রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর একটি রেল-কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।
একনেক সভায় জানানো হয়, ১৯ হাজার ৫৬ কোটির সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪২৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ প্রকল্পে ১১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি স্থানান্তর ও অন্যান্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচিত তিনটি অর্থনৈতিক গ্রোথ করিডরের অন্তর্ভুক্ত ৬টি সিটি কর্পোরেশন ও ৮১টি পৌরসভার জলবায়ু সহনশীল নগর অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিষেবা বৃদ্ধি করতে ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ব্যয়ে রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট (আরইউটিডিপি) প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ৪ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পে আওতায় ৮৮০ কিলোমিটার নগর সড়ক উন্নয়ন, ২০০০ মিটার ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, ২০০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে বা ফুটপাথ নির্মাণ, ৫৯৫ কিলোমিটার স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও অন্যান্য কাজ করা হবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর একটি রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্প। এটি ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া। অথচ প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১০ গুণ ব্যয়ে প্রকল্পটি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অনুমোদন পেয়েছে।
একনেক সভায় মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ছে ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পটিতে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কক্সবাজার মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমানোসহ ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো। প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ২৯১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ৭৬০ মিটার বার্থ নির্মাণ, ৩৯৭ মিটার ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ, সড়ক প্রতিরক্ষাসহ ১৬.৫২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এদিকে, মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য একনেকে আরও ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সেগুলো হলো-কুষ্টিয়া জেলায় নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ভুয়াপুর-তারাকান্দি জেলা মহাসড়ক (জেড-৪৮০১) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, বৈরাগীপুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক (জেড-৮-৯১০) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চর কাউয়া) থেকে ভোলা (ইলিশ ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর (জেড-২৮২২) সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে পিসি গার্ডার সেতু (রাজাপুর সেতু) নির্মাণ ও ৭.৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।
এছাড়া শিল্প ও শক্তি বিভাগের দুটি প্রকল্প একনেকে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর সিক্স এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি (বিশেষ সংশোধিত) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প।