বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজ চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। আর তখনই প্রকল্পটির মূল কাজ দৃশ্যমান হবে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে খননকাজ করতে বৃহদাকার ‘টানেল বোরিং মেশিন’ বা টিবিএম নির্মাণ শেষ পর্যায়ে আছে। এটি তৈরি হচ্ছে চীনে। যন্ত্রটি তৈরি হওয়ার পর আগামী মে মাস নাগাদ এটি দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সেতু পরিবহন কর্তৃপক্ষের এ যুগ্মসচিব দেওয়ান সাঈদুল হাসান জানান, কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। চীনের সাংহাই শহরের মত করে এটি গড়ে উঠছে।
সূত্র মতে, সাধারণত সাগরের তলদেশে সুড়ঙ্গ বা টানেল নির্মাণ কাজে এ টিবিএম ব্যবহৃত হয়। যন্ত্রটি বিশালকার এবং এটি কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজের জন্যই বাংলাদেশে প্রথম আনা হচ্ছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর নাগাদ বোরিং কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এ টানেলের অভ্যন্তরীণ ব্যাস থাকবে ১০ দশমিক ৮০ মিটার। যুগ্ম সচিব দেওয়ান সাঈদুল হাসান বলেন, বর্তমানে টানেল নির্মাণের জন্য ডায়াফ্রাম ওয়াল এবং রোটারি জেট গ্রাউটিং নির্মাণ কাজ চলমান। ডায়াফ্রাম ওয়াল হচ্ছে এমন এক স্থায়ী ব্যবস্থা যা ভূগর্ভে স্ট্রাকচারাল উপাদানগুলোকে ধরে রাখে। যুগ্ম সচিব আরও জানান, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পশ্চিম প্রান্তে বন্দর থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজার ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩৩ দশমিক ৪৮৫২ একর ভূমির ক্ষতিপূরণের অর্থ জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক শীঘ্রই এ জমির দখল বুঝিয়ে দেবেন। একই প্রান্তে বিভিন্ন সংস্থার ৩৬ দশমিক ৪১৫৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।
এছাড়া প্রকল্পের পূর্ব প্রান্তের টানেল ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের জন্য ৯০ দশমিক ২৭৩ একর এবং পুনর্বাসনের জন্য ১৯ দশমিক ৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন। জানা গেছে, প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের জন্য ৮৫ দশমিক ৮৯০১ একর ভূমি দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত পাওয়া গেছে। যা ইতিমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্পের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে পৃথকভাবে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থায়ী সংযোগ প্রদানের জন্য সাব স্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলমান। প্রকল্প সাইটে ১টি ৩৩ কেভি ও ২টি ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইন স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অফিস নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পূর্ব প্রান্তে আনোয়ারা অংশে সাইট ক্যাম্প ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ এবং ৩৮ দশমিক ২০৭ একর ভূমির মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার ওপরে। সরকার ও চীনের দি এক্সপোর্ট–ইমমোর্ট ব্যাংক অব চায়না এতে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পটি আগামী ২০২০ সালে জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ টানেল হবে দুই লেন বিশিষ্ট। লম্বায় হবে তিন হাজার ৩১৫ মিটার। চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর প্রকল্পের ঋণচুক্তি হয়েছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ১৪১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।