পাহাড়ের জুম্মজাতির নেতা, ভিনদেশী নাগরিক, আপামর বাঙালি এক স্রোতে মিশে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি, যারা প্রাণের ভাষা বাংলার জন্য রাজপথে রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারি সবাই মিলেছেন এক মোহনায়, চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
মঙ্গলবার রাতে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ঢল নেমেছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কেউ এসেছেন ব্যানার-পুষ্পস্তবক নিয়ে, কারও বুকের কাছে ধরে রাখা লাল টকটকে গোলাপ। শহীদ মিনার এবং আশপাশের এলাকা হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য।
রাত ১২টা ১ মিনিটে নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন থেকে বেজে উঠে সময়ের ঘণ্টা। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা। নগর পুলিশের একটি চৌকস দল সশস্ত্র অভিবাদনের মধ্য দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পালা। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন।
রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জনসংহতি সমিতির নেতা উষাতন তালুকদারও ফুল নিয়ে এসেছিলেন শহীদ মিনারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ নাগরিক গোলাপ নিয়ে আসেন শহীদ মিনারে। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম নির্বাচিত সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো.আব্দুল মান্নান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনিরুজ্জামান, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূর ই আলম মিনা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরীও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলাও মহানগর কমান্ডের নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। তাদের সঙ্গে ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নেতারাও শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী ও সদস্য আসিফ সিরাজ, সিইউজে’র সভাপতি নাজিমউদ্দিন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এবং প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও শুকলাল দাশ ছিলেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, শিল্প পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), শিল্প পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও ফুল দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র, কাস্টমস, ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে পুলিশ, আরআরএফ কমান্ড্যান্ট, আনসার ও ভিডিপি, বন বিভাগ, সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, বিআইডব্লিউটিসি, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড, ইউএসটিসি’র পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হয়।
নগর কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর নেতৃত্বে নগর যুবলীগ, সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণির নেতৃত্বে নগর ছাত্রলীগ, নগর শ্রমিক লীগ, ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, হকার্স লীগের নেতারাও শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছেন।
শেখ রাসেলস্মৃতি সংসদ, সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশন, সম্মিলিত পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনসহ কয়েক’শ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
পুস্পস্তবক অর্পণের পুরোটা সময়ই শহীদ মিনারে আসা বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী, সাধারণ মানুষ শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে রাখেন।
নগর পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।