ইউনিক আইডির আওতায় আসছে প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থী

প্রাথমিক শিক্ষাকে ধরা হয় সব ধরনের শিক্ষার মূল ভিত্তি হিসেবে। সেখানে ঝরে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। প্রাথমিকে এই ঝরে পড়া ঠেকাতে প্রতিটি শিশুর জন্য একটি একক আইডি (ইউনিক আইডি) বা প্রোফাইল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের (সিআরভিএস) মাধ্যমে দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে একই ফ্রেমে নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যায়ে অধ্যায়নরত দুই কোটি ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরির জন্য ‘প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন’ প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি মার্চ ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে। দুই কোটি ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরির পরও নতুন নতুন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ খাতে প্রথম ধাপে ব্যয় করা হবে ১৮০ কোটি টাকা। এই আইডিতে মাধ্যমে শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন, বই বিতরণ, ভর্তি, উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিংসহ সব ধরনের তথ্য থাকবে।

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের এক ফ্রেমে আনতে কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, আইসিটি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ও শিক্ষাবোর্ড।

শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক ড্রপ হচ্ছে। ড্রপ হয়ে বাচ্চাটা কোথায় যাচ্ছে এই হিসাব আমাদের হাতে থাকে না। এটা শনাক্ত করা জরুরি। এজন্যই ইউনিক আইডি দেওয়া হবে। নগর ও গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা কী ধরনের সমস্যা ফেস করে সেটা বের করা দরকার। উন্নত দেশে পারসোনাল আইডি ও একাডেমি আইডি দেওয়া হয়। আমরা উন্নত দেশের কাতারে যাচ্ছি। সুতরাং, এটা করা সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে সাড়ে ১০ কোটি নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ১২ কোটি নাগরিকের আরেকটি ডাটাবেজের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১০ কোটি নাগরিকের জন্য সময়ভিত্তিক স্বাস্থ্য শুমারি পরিচালনা করছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোতে ১৬ কোটি মানুষের দারিদ্র্যসূচক প্রস্তুতের অংশ হিসেবে একটা ডাটাবেজ তৈরি করছে।

তবে এসব ডাটাবেজে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো তথ্য না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর জন্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের নাম, বাবা-মায়ের নাম একেক জায়গায় একেক ধরনের থাকে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক ধরনের তথ্য থাকে। তথ্যের গরমিলে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের বিডম্বনায় পড়ছে। এসব সমস্যা ঠেকাতেও সহায়ক হবে ইউনিক আইডি।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) এনামুল কাদের খান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই। আমরা সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর হাতে ইউনিক আইডি তুলে দেবো। এজন্য একটা ডাটাবেজ তৈরি হবে। ইউনিক আইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সব ধরনের তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে এক ক্লিকেই।

‘প্রাথমিকে শিক্ষার্থী উপবৃত্তি ও বই ঠিকমতো পেলো কিনা, এসব তথ্য জানা যাবে সহজে। এই ইউনিক আইডি শিক্ষার্থীরা সারাজীবন ব্যবহার করতে পারবে। এটা নাগরিক সনদ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। এর মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী পাসপোর্ট ও ভিসাসহ নানা কাজ করতে পারবে।’