আলো বেচে ২৪ কোটি টাকা আয়

কুতুবদিয়া বাতিঘরের বাতিগুলো ১০ সেকেন্ডে তিন বার জ্বলে বা ফ্লাশ করে। সেন্টমার্টিন বাতিঘর ২০ সেকেন্ডে দুই বার জ্বলে। কক্সবাজারের বাতিঘর ১৫ সেকেন্ডে একবার জ্বলে ওঠে।

তিন বাতিঘরের আলোতে উত্তাল সমুদ্রে পথের দিশা পায় ছোট-বড় সব বাণিজ্যিক জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার-নৌযান থেকে শুরু করে শুভেচ্ছা সফরে আসা বিশেষায়িত জাহাজগুলো। বাতিঘরগুলো শুধু বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না একই সঙ্গে আয়ও করছে।

তিনটি বাতিঘরের আলো বেচে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আয় করেছে নৌবাণিজ্য দফতর। সমুদ্রগামী দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকেই বেশিরভাগ আয় হয়েছে।

নৌবাণিজ্য দফতরের প্রধান কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম সোমবার (৯ জুলাই) জানান, বাতিঘরের আয়টা মুখ্য নয়। বাতিঘরগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ‍জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। একেকটি বাতিঘর সমুদ্রগামী জাহাজ ও মাছধরার নৌযানগুলোর জন্য পথপ্রদর্শক। কক্সবাজার বাতিঘর দেশের মূল ভূখণ্ডে হওয়ায় পিডিবি’র বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে সচল রাখার কাজটা সহজ। কিন্তু কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনের বাতিঘর সচল রাখতে হয় জেনারেটর ও সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে।

তিনি জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাতিঘর খাতে আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এবার প্রায় ৫ কোটি টাকা বেশি আয় হয়েছে।

নৌবাণিজ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে মাসে টনপ্রতি ৫ টাকা বাতিঘর ফি নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ অন্যান্য চার্জের সঙ্গে ওই টাকা সংগ্রহ করে নৌবাণিজ্য দফতরকে বুঝিয়ে দেয়। এ ছাড়া ১০ টনের ওপরের ফিশিং ট্রলার ও অন্যান্য দেশি জাহাজের ক্ষেত্রে বার্ষিক টনপ্রতি ২ টাকা হারে বাতিঘর চার্জ নেওয়া হয়। শুভেচ্ছা সফরে আসা বিদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে বাতিঘর চার্জ নেওয়া হয় না।

সূত্র জানায়, ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব জিএমডি এসএস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় নিঝুমদ্বীপ, ঢালচর, দুবলারচর, কুয়াকাটায় চারটি নতুন বাতিঘর ও দেশের সাতটি উপকূলীয় এলাকায় সিগন্যাল রেডিও স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া বাতিঘর আধুনিকায়নও করা হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের উপকূলে নৌ-নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নেভিগেশনাল সহায়তা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন ও পরিচালনা সহজতর হবে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) আন্তর্জাতিক কনভেনশনের চাহিদা পূরণ, আধুনিক নেভিগেশনাল সহায়তা, ভ্যাসেল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

কুতুবদিয়ায় ১৮৪৬ সালে প্রথম বাতিঘর চালু হয়। ইটের সুউচ্চ গাঁথুনির ওপর বিশেষ কৌশলে নির্মিত মূল বাতিঘরটি সাগরে বিলীন হওয়ার পর কিছুটা দূরে লোহার এঙ্গেলের দিয়ে বর্তমান বাতিঘরটি তৈরি করা হয়। সর্বশেষ গত মার্চে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান কুতুবদিয়া বাতিঘরের আধুনিকায়নের ভিত্তি স্থাপন করেন। ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াইশ’ ফুট উঁচু করা হবে বাতিঘরটি। কক্সবাজারে ও সেন্টমার্টিনে ১৯৭৬ সালে বাতিঘর স্থাপন করা হয়। সেগুলোও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সূত্র বাংলানিউজ