আরেকটা সিরিজ খেলতে পারেন সাকিব আল হাসান

হজ থেকেই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বদলে এক দিনের জন্য ফিরতে হয়েছিল দেশে। আরেকটি সিদ্ধান্ত যে নেওয়ার বাকি ছিল! সেই সিদ্ধান্ত স্বস্তি হয়ে এসেছে বাংলাদেশ দলের জন্য। আঙুলের অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দিয়ে এশিয়া কাপে খেলছেন সাকিব আল হাসান। ছুটি শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সরাসরি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন দুবাইয়ে। সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার কথা বললেন অস্ত্রোপচার পেছানো, তিন নম্বরে খেলা ও আসছে এশিয়া কাপ নিয়ে।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা কঠিন ছিল?
সাকিব আল হাসান: খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই খুব কঠিন নয়। না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। আমি কিন্তু কখনোই বলিনি যে এশিয়া কাপ খেলব না। আঙুলের ইনজুরির কথা ভেবেই বলছিলাম যে, যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করাতে চাই। পরে সবার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, এশিয়া কাপে খেলা জরুরি। দলের যখন প্রয়োজন, তখন খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ।
প্রশ্ন: কিন্তু ওই আঙুলে যদি আবার বল লাগে বা কোনো ভাবে চোট লাগে?
সাকিব: সেই শঙ্কা তো খেলাধূলায় সবসময়ই থাকে। এমনিতেই যে কোনো সময় ইনজ্যুরড হতে পারি। দেখা গেল, এই আঙুলে কিছু হয়নি, অন্য কোনো ইনজুরিতে পড়লাম। খেলোয়াড়দের সবসময়ই এসব শঙ্কাকে সঙ্গী করে মাঠে নামতে হয়। অত ভাবলে তো আর চলে না।
প্রশ্ন: অধিনায়কের চাওয়া কি ছিল?
সাকিব: মাশরাফি ভাই কিছুই বলেননি। আমার ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: তাহলে এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অস্ত্রোপচার?
সাকিব: এখনও পর্যন্ত সেটিই সিদ্ধান্ত। এশিয়া কাপ শেষে যত দ্রুত সম্ভব। তবে সেটা অস্ট্রেলিয়ায় হবে, নাকি ইংল্যান্ডে না যুক্তরাষ্ট্রে, সেই সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রশ্ন: বছরের শুরুতে তিনে নামার পর থেকে তো আপনি দারুণ ধারাবাহিক। সাত ইনিংসে চারটি ফিফটি, একবার কেবল আউট হয়েছেন ৩৫-এর নিচে। শুরুটায় আপনি নিজে কতটা খুশি?
সাকিব: পারফরমারের তৃপ্তি বলে কিছু নেই। আর আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে কখনো ভাবিও না। সবসময়ই বলে এসেছি, দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলেই খুশি। সেটা যত রানই হোক, যে পজিশন থেকে হোক। তবে হ্যাঁ, তিন নম্বরে আমার চেয়ে ভালো তো মনে হয় আমাদের দলে আর কেউ করেনি!
প্রশ্ন: তিন নম্বরে ৫টির বেশি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আপনার গড় (৪২.৪৪) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
সাকিব: পরিসংখ্যান আমি দেখিনি, তবে ধারণা করছিলাম। এই তো, শুরুটা খারাপ হয়নি বলেই তো মনে হয়!
প্রশ্ন: এশিয়া কাপ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
সাকিব: বিশ্বাস করুন, এশিয়া কাপ নিয়ে এখনও কিছুই ভাবিনি। ভাবলে সত্যিই বলতাম। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি, পুরো সময় পরিবারকেই দিচ্ছি। ক্রিকেট মাথায় নেই। যখন দুবাইয়ে যাব, তখন থেকে এশিয়া কাপ নিয়ে ভাবতে শুরু করব।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে যদি ভাবতে বলা হয়, গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের দুই প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই কেমন হবে?
সাকিব: শ্রীলঙ্কা দলটা গুছিয়ে উঠছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ হারলেও শেষ দিকে কিন্তু দারুণ খেলেছে। দুবাই-আবুধাবিতে পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক এচ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে ওদের। আফগানিস্তানকে গোণায় রাখতেই হবে। হয়ত খুব বেশি দূর যেতে পারবে না, কিন্তু ওদের যা শক্তি, তাতে যে কোনো দিনই যে কোনো কিছু করার সামর্থ্য আছে। খুব ব্যালান্সড দল। আমাদের খুব ভালো খেলতে হবে।
প্রশ্ন: প্রথম পর্ব উতরালে সামনে ভারত-পাকিস্তান।
সাকিব: বিরাট কোহলি না থাকলেও ভারত দারুণ দল। কোহলি ছাড়া তো সবাই আছে। ব্যাটিং লাইন আপে এচ উইনার অনেক। বোলিং দারুণ। দুই রিস্ট স্পিনার (যুজবেন্দ্র চেহেল ও কুলদীপ যাদব) দারুণ করছে। পাকিস্তান দুর্দান্ত ফর্মে আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ওরা। ২০১৫ সালে ওদেরকে আমরা যখন হোয়াইটওয়াশ করেছিলাম, তার চেয়ে এই দল অনেক ভালো ও আত্মবিশ্বাসী। ব্যাটিং তবু যেমন-তেমন, বোলিংটা অসাধারণ। বাঁহাতি পেসার, ডানহাতি পেসার, জোরে বোলার, সুইং বোলার, লেগ স্পিনার, বাঁহাতি স্পিনার, সব মিলিয়ে অনেক বৈচিত্র দলে, অনেক অলরাউন্ডার আছে। আমাদের কাজটা সহজ হবে না।
প্রশ্ন: পাকিস্তানের তো হোম ভেন্যু দুবাই-আবুধাবি। বাংলাদেশের খুব বেশি জনের অভিজ্ঞতা নেই ওখানে খেলার। আপনি খেলেছেন পিএসএলে, আসলে কেমন ওখানকার কন্ডিশন?
সাকিব: পাকিস্তান একটু সুবিধা তো পাবেই। আর কন্ডিশন ওখানে সত্যিই আলাদা। এশিয়ার মধ্যে হলেও আমাদের উপমহাদেশের মতো নয়। গরম আমাদের এখানেও আছে, তবে ওই গরম অন্যরকম। উইকেটও। আমি বলে বোঝাতে পারছি না কেমন আলাদা, কিন্তু ওখানে গেলে বোঝা যায়। আসলেই আলাদা। একটা ভালো ব্যাপার যে আমরা দুয়েকদিন আগে যাচ্ছি। দেখা যাক, ভালো কিছুর আশাই করছি।-বিডিনিউজ