আরাঁর ঘর বাড়ি বিয়াগ্গিন শঙ্খনদীত গেইওই। আরাঁ এহন অসহায়।

শহীদুল ইসলাম বাবর: অবাজি আরাঁর কি ঈদ? আরাঁর ঘর বাড়ি বিয়াগ্গিন শঙ্খনদীত গেইওই। আরাঁ এহন অসহায়। আরাঁ নিঃস্ব। বাবা আমাদের কি ঈদ? আমাদের বাড়ি ঘর সব কিছু শঙ্খনদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায়, আমরা নিঃস্ব। কেমন হলো ঈদ? এমন প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত কথা গুলো বলেছেন দক্ষিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইশ ইউনিয়নের পূর্ব আমিলাইশ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ জাফর আহমদ। আমিলাইশ ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরির্দশনকালে উপরোক্ত কথা বলেন তিনি।

সরেজমিন পরির্দশনে দেখা যায়, বড় বড় পাকা দালানসহ শতাধিক বসত ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীতে অর্ধেক তলিয়ে গেছে একাধিক বড় বড় পাকা ঘর। ভাঙনের কবল থেকে বসত ঘর রক্ষা করতে না পারলেও বাড়িতে রক্ষিত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি রক্ষার জন্য ঘর থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ পত্র বের করে নিচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকেই নদী পাড়ে বসে তলিয়ে যাওয়ার বসত ঘরের দিকে তাকিয়ে ফেলছে দীর্ঘশ্বাস। ঠিক এমনি চিত্র বিরাজ করছে দক্ষিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আমিলাইশ ইউনিয়নের শঙ্খনদের পাড়ে।

জানা যায়, ঈদের দুই দিন আগে থেকে বেড়ে যাওয়া ভাঙনের তীব্রতায় মাত্র এক সপ্তাহের কম সময়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বেশ কয়েকটি পাকা ঘর। এর মধ্যে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি দ্বিতল বিশিষ্ট পাকা ঘরও। জানা যায়, আমিলাইশ ইউনিয়নের পূর্ব আমিলাইশ ৩ নং ওয়ার্ড়ের সারওয়ার চেয়ারম্যানের বাড়ি, আনোয়ার বর বাড়ি,পেন্ডির বর বাড়ি,রাইত্যার বর বাড়ি, কুরা সাহেবের বাড়ি, কালুর বর বাড়ি,বাচার বর বাড়ির শতাধিক বসত ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে হয়ে গেছে। বিলীহের অপেক্ষায় রয়েছে আরো শতাধিক বসত ঘর, মসজিদ, মন্দির, বাজার, স্কুল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

আমিলাইশের সাবেক চেয়ারম্যান নেতা সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, চলতি সপ্তাহের নদী ভাঙ্গনে মো. ইদ্রিস, মো. ইউছুপ, আবুল হোসেন, নাছির উদ্দিন, সহিদ উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, ফোরকান আহমদ, মোহাম্মদ মুছা, আব্দুর রহিম,আব্দুল হালিম, আব্দুল মান্নান,আব্দুল করিম, জাফর হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন, জয়নাল আবেদীন, গিয়াস উদ্দিন,সাহাব উদ্দিন, মহিউদ্দিন, আব্দুর রশিদ, আব্দুশ শুক্কুর, রাবেয়া বেগম,মোহাম্মদ হাসান,মোহাম্মদ হানিফ, সামশুল আলম, ইয়াকুব হোসেন, আবছার উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, মঈনুদ্দিন, দানু মিয়া, সরওয়ার আলম,ইমাম শরীফ, নুরুল আলম, আহমদ ছফা, জাহাঙ্গীর আলম, আহমদ হোসেন, শহীদুল ইসলাম, শোয়াইব, ফরিদুল আলম , মোহাম্মদ ইদ্রিস, কবির আহমদ, মৃত জমির আহমদ, আব্দুর রহমান, ছালেহ আহমদ, বজল আহমদ,রেহেনা বেগম, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রশিদ, মোস্তাফিজুর রহমান, নুর হোসেনম আব্দুল করিম, নুরুল আলম , শফিক আহমদ, জামাল উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ সিরাজ,মোহাম্মদ আইয়ুব, মোহাম্মদ আমিন, বদিউল আলম, সৈয়দ আহমদ, মোহাম্মদ ইউছুপ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ হোসেন, সামশুল ইসলাম, আব্দুল করিমসহ আরো বেশ কিছু মানুষের বসত ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষ গুলো রাস্তার কিনারায় তাবু টাঙ্গিয়ে কোন রকমে মানবেতর কাল যাপন করছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন পরির্দশনকালে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ বৃদ্ধ জাফর আহমদ বলেন, আমার জীবনে আমি এমন নদী ভাঙন আগে দেখিনি। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ব্যাপক ভাঙনে আমার বসতঘর শতাধিক বসত ঘর নদীতে হারিয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব, অসহায়, সরকারের সু দৃষ্টি ছাড়া আমার আর কোন উপায় নাই।

বসত ঘর হারানো আবুল হাসেম বলেন, আমার সব কিছু শেষ। এখন আমি নিঃস্ব। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও মাথা গোজাঁর ঠাই নেই। আমরা কোথাই যাব। কোথাই থাকব কিছুই জানা নেই।

আরেক ক্ষতিগ্রস্থ মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের এখানে নদী ভাঙ্গনের সমস্যা আগেও ছিল। কিন্তু এতটা ভয়াবহ নয়। আমরা ১০ কেজি চাউল চাইনা। আমরা নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সামাধান চাই। নদী ভাঙনে বিলীন হওয়া সব চেয়ে বড় ও অত্যাধুনিক বাড়ির মালিক হচ্ছে শহীদ উদ্দিন। তিনি জানান, আমি স্থাানীয় ভাবে ব্যাপক সবজির চাষ করতাম। সেই সবজি বিক্রির টাকায় বিশাল আকারের বাড়ি করেছিলাম। লাগিয়েছিলাম উন্নত মানের টাইলস। কিন্তু সেই বাড়ি আজ স্মৃতি হয়ে গেছে। এখন আর সেই বাড়ি নেই। হারিয়ে গেছে নদীগর্ভে।

আমিলাইশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি বাড়ির পার্শ্ববর্তি অর্ধ শতাধিক বসত ঘর নদীতে হারিয়ে গেছে। নদীতে ঘর হারানো মানুষ গুলো একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের শুধু ঘর গেছে তা নয় তাদের ফসলী জমি, ধানের গোলা, গাছপালাও নদীতে হারিয়ে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমিলাইশের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সামশুল ইসলাম বলেন, যে হারে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে পূর্ব আমিলাইশের ব্যাপক এলাকা নদীতে হারিয়ে যাবে। বাড়ি ঘর হারানো মানুষ গুলো এখন নিঃস্ব। সরকারী খাস জায়গায় তাদের জরুরী ভিত্তিতে পূর্নবাসন করতে হবে।

ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, ভাঙনের খবর শুনেই আমি সরেজমিন পরির্দশনে গিয়েছিলাম। তখন ১৫টির মত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। এখন আরো বেশি। এখন হয়তো ৩০-৪০ টা বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। শিগগিরই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট রির্পোট প্রেরণ করব।

তাদের জন্য কোন সহায়তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ১শ পরিবারকে ২ মেঃ টন চাল বিতরণ করেছি। আরো সাহায্য চাওয়া হয়েছে। প্রাপ্তি সাপেক্ষ তা বিতরন করা হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার শাহা বলেন, আমিলাইশসহ এতদঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের বিষয়ে খোজ খবর নিচ্ছি। আমিলাইশ এলাকার ভাঙনের বিষয়ে প্রকল্প পাশ হয়ে আছে। এ বর্ষাতে তো আর কাজ করা যাবেনা। বর্ষা মৌসুমের পরেই কাজ শুরু হবে। তবে ইর্মাজেন্সিতে আমরা কিছু কাজ করার চেষ্টা করব।