আজ পবিত্র হজ। সোমবার সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজীরা। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) আরাফাতে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষা ও বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের প্রায় ২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের লক্ষ্যে মিনা থেকে আরাফাতে যাবেন। বাংলাদেশ হজ ম্যানেজমেন্ট পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লক্ষ ২৭ হাজার ২৯৭জন হাজী হজ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছেন।
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ। ধবধবে সাদা দুই টুকরো ইহরাম পরিহিত অবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে উচ্চারিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক’। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘আমি হাজির। হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধুই তোমার। সব সাম্রাজ্য তোমার।’
আরাফাহ ও আরাফাত এই দুটো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। মসজিদে নামিরাহয় গিয়ে আরাফাত সীমান্ত শেষ হয়েছে। মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন মসজিদে নববীর খতিব ড. হোসাইন বিন আবদুল আজিজ আল শাইখ।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় মিনায় ধুলি ঝড় ও বৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে করে হাজীরা কিছুটা দুর্ভোগে পড়েছেন। মিনা থেকে গাউসিয়া হজ কাফেলার মুয়াল্লিম আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ রাতে আজাদীকে জানান, সৌদিআরব সময় সন্ধ্যা ৭টায় (মাগরিবের নামাজের সময়) ধুলিঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় ২ ঘন্টার মত বলবৎ ছিল। আজ রাতে মিনা থেকে হাজীদের আরাফাতে যাওয়ার কথা রয়েছে। হাজীরা নিরাপদে আছেন জানিয়ে তিনি তাদের জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।
আল রাফি ওমরাহ ও হজ কাফেলার পরিচালক আলহাজ মুজিবুল হক শুক্কুর জানান, বৃষ্টির কারণে আরাফার তাবুগুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এতে হাজীদের কষ্ট বাড়বে। সেখানকার তাবুগুলো অস্থায়ী হওয়ার কারণে বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারি বৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় তিনি বলেন, বৃষ্টি কমে গেছে, এখন শঙ্কার কিছু নেই। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে মিনা এখন শান্ত, দুর্যোগ আবহাওয়া কেটে গেছে। আল্লাহর মেহমান হাজীগণ নিরাপদ আছেন। আজ রাতে যদি হাজীরা আরাফার ময়দানে যেতে নাও পারে, কাল ফজরের পর পর হাজীরা রওয়ানা দেবেন ইনশা আল্লাহ।
আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। তাঁরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে।
হজের দ্বিতীয় দিন ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। হাজিরা মক্কায় ফিরে কাবা শরিফ ‘তাওয়াফ’ ও ‘সাঈ’ (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা–মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো) করে আবার মিনায় ফিরে যাবেন।
জিলহজের ১১ তারিখ মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত। পরদিন ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যা স্েতর আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। আর মক্কায় পৌঁছার পর কাবা শরিফে স্থানীয়রা ছাড়া হাজিরা বিদায়ী তাওয়াফ, অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ পালন।
এবার হজে মক্কা নগরীসহ আরাফাত মিনা মুজদালিফায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজিদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও ইলেকট্রনিক ব্রেস লাইট সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাজিদের পিপাসা নিবারণের জন্য ১৫ লাখ গ্যালন জমজমের পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগামী ২৭ আগস্ট প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে, হাজীদের আসা শেষ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর।