বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আজ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) থেকে শুরু হল ট্রানজিট বানিজ্য। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মূলত এই ট্রানশিপমেন্ট ব্যবসার সূচনা। এ লক্ষ্যে ভারতের কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর থেকে চার কনটেইনার রড ও ডালের একটি চালান নিয়ে হলদিয়া বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেচে কোস্টাল জাহাজ এমভি সেঁজুতি। জাহাজ থেকে ভারতীয় পণ্যগুলো খালাস করে সড়ক পথে দুই কনটেইনার রড যাবে ত্রিপুরায় এবং দুই কনটেইনার ডাল নিয়ে যাবে আসামে। বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ১ জেটিতে নোঙর করে ভারতের ট্রানজিট পণ্যবাহী জাহাজ এমভি সেঁজুতি। প্রাথমিকভাবে এটিকে বলা হচ্ছে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’ চুক্তির চুক্তির আওতায় প্রণীত এসওপি অনুযায়ী ট্রানজিট পণ্যবাহী চারটি কনটেইনারের প্রথম ট্রায়াল সম্পন্ন করা হবে।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান বার্থিং নীতিমালা অনুযায়ী আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে (ফার্স্ট কাম, ফার্স্ট সার্ভ) জাহাজ বার্থিং করা হবে। ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী পোর্ট ডিউজ, পাইলটেজ ফি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক চার্জ ও ফি আদায় করা হবে ট্রানজিট কনটেইনারগুলোর বিপরীতে।
বন্দর সচিব জানান, প্রতিটি কনটেইনারের বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃক সরকারি মাশুল আদায় করা হবে। বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহারের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্ধারিত মাশুল আদায় করবে। তা ছাড়া দেশের শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কার্গো পরিবহন এজেন্টের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। আশা করা যায় পুরো প্রক্রিয়ায় দেশের অর্থনীতিই চাঙা হবে ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ট্রানজিট পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট সাতটি মাশুল আদায় করবে। এতে কনটেইনার প্রতি মোট মাশুল হবে ৪৮ ডলার থেকে ৫৫ ডলার। যাবতীয় কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ট্রানজিট পণ্যভর্তি কনটেইনারগুলো বন্দর থেকে কাস্টমস স্কটে যাবে সীমান্ত পর্যন্ত। জাহাজ থেকে খালাস করে কনটেইনারগুলো ট্রেইলারে সড়ক পথে যাবে ওপারে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি কনসাইনমেন্টে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি টন প্রতি ৩০, নিরাপত্তা চার্জ টনপ্রতি ১০০, এসকার্ট চার্জ টনপ্রতি ৫০, অন্যান্য প্রশাসনিক চার্জ ১০০ ও প্রতিটি কনটেইনার স্ক্যানিং চার্জ ২৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইলেকট্রিক লক, সিল ইত্যাদির জন্য আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর তাদের নির্ধারিত মাশুল পাবে। সড়ক পথে পণ্য পরিবহনের ভাড়া পাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।
বন্দর তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কনটেইনার রাখায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা চার দিন বিনামূল্যে রাখার সুযোগ পায়। ভারতের আমদানিকারকদের জন্য এ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ দিন। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাংলাদেশ ও ভারতের আমদানিকারকদের জন্য একই। এজন্য নির্ধারিত হারেই চার্জ গুণতে হবে ভারতকে।
তথ্য মতে ভারতের সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কলকাতা থেকে সড়ক পথে ট্রাকে পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগে এক সপ্তাহ। নতুন এই রুটে প্রায় দুদিনের মধ্যে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর সড়কপথে দিনে দিনে পৌঁছাবে আগরতালা সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা। পরবর্তীতে অন্য সব রাজ্যগুলোতেও পণ্য পরিবহন শুরু হবে।