আইপি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে নগরীর ৯ স্থানে

অপরাধী শনাক্ত করতে ইন্টারনেট প্রটোকল ক্যামেরার (আইপি) যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। প্রাথমিকভাবে নগরীর নয়টি স্থানে ২৯টি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দামপাড়া নগর পুলিশ কমিশনার অফিসের পঞ্চম তলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এলইডি টাইলসে এসব ক্যামেরার মনিটর বসানো হবে। সংসদ নির্বাচনের আগেই এসব ক্যামেরা বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর পেছনে ব্যয় হবে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা। পুরো ব্যয়ভার বহন করছে সিএমপি। এতে দেশের যে কোন প্রান্তে বসে ক্যামেরার আওতাভুক্ত এলাকা দেখা সম্ভব হবে। সাধারণত হাইটেক সিকিউরিটির কাজে আইপি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১১৬টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) বসানো হয়েছিল। এরমধ্যে ৩০ থেকে ৪০ টি ক্যামেরা সচল রয়েছে। বাকীগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পাইলট প্রকল্প হিসাবে নগরীর নয়টি স্থানে ২৯টি আইপি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে আইপি ক্যামেরা বসানো হবে তা হলো : মির্জাপুল, প্যারেড মাঠের উত্তর পশ্চিম কোণ, দিদার মার্কেট, শাহ আমানত মার্কেট, নেভাল মোড়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মোড়, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা মোড় ও আলমাস সিনেমা হল মোড়। পর্যায়ক্রমে নগরীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো আইপি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জানান, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আইপি ক্যামেরা বসানোর বিকল্প নেই। আধুনিক প্রযুক্তির এসব ক্যামেরা ইন্টারনেটে অপারেটিং করার সুবিধা ছাড়াও সাউন্ড ডিটেক্টর সিস্টেম সুবিধাও পাওয়া যাবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কন্ট্রোল কক্ষ ছাড়াও মুঠোফোনের মাধ্যমে যে কোন স্থান থেকে আইপি ক্যামেরার আওতাভুক্ত এলাকা নজরদারি করা যাবে।
ইন্টারনেট প্রটোকল ক্যামেরা বা আইপি ক্যামেরা বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী সার্ভিলেন্স তথা নজরদারি, মনিটরিংয়ের কাজে অনেক বেশি ব্যবহৃত জনপ্রিয় ক্যামেরা। ১৯৯৬ সালে এক্সিস নেটওয়ে নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে আইপি ক্যামেরা প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে। বর্তমানে সিকিউরিটি, সার্ভিলেন্স মনিটরিংয়ের কাজে মানুষের আইপি ক্যামেরার প্রতি আগ্রহ বেশি। সাধারণত হাইটেক সিকিউরিটির কাজে আইপি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। রিমোট বা দূর থেকে বাস, অফিস বা যে কোন স্থানের ওপর নজরদারি রাখতে এ ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ওয়াইফাই অথবা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের সাহায্যে এ ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু ক্যামেরার সাথে স্পিকার যুক্ত থাকে যার মাধ্যমে কথা বলা ছাড়াও নাইটভিশন সুবিধাও পাওয়া যায়।
নারায়নগঞ্জে সাত খুনের পর ২০১৪ সালে নগরীতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ নেয় সিএমপি। তখন বলা হয়েছিল, পুুরো নগরীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এতে চোর, ছিনতাইকারী কিংবা প্রকাশ্যে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির সাথে জড়িতদের সহজে চিহ্নিত করা যাবে। সিসি ক্যামেরার এ প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে নগরীর সাতটি প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি স্থানে ১৩৯টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। এসব ক্যামেরার কন্ট্রোলরুম বসানো হয় সিএমপির সদর দপ্তরে। এতে সিএমপিতে বসে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানের চিত্র দেখা সম্ভব ছিল।
নগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নগরীর ৩০টি স্থানে ১১৩টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। স্থানগুলো হলো : নিউমার্কেট, শাহ আমানত গোলচত্বর, জিইসি মোড়, মুরাদপুপর মোড়, আকবরশাহ মোড়, রাহাত্তারপুল, বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাগরিকা, অক্সিজেন, পিএইচপি স্পিনিং মিল, সিটি গেট, কাজীর দেউড়ি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, দেওয়ানহাট ব্রিজ, সিইপিজেড, ইস্পাহানি মোড়, অলংকার মোড়, বাদামতলি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বড়পোল, প্রবর্তক মোড়, নিমতলা বিশ্বরোড, টেরিবাজার, সল্টগোলা, দুই নম্বর গেট, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, অক্সিজেন চেকপোস্ট, সিটি গেট চোকপোস্ট ও কোর্ট বিল্ডিং। এরমধ্যে নগরীর প্রবেশমুখ অক্সিজেন মোড়ের লাগানো চারটি ক্যামেরার চারটিই নষ্ট রয়েছে এক বছরের অধিক সময় ধরে। একইভাবে নিউমার্কেট মোড়ে লাগানো চারটি ক্যামেরার মধ্যে একটি, জিইসি মোড়ের তিনটির মধ্যে একটি, মুরাদপুর মোড়ে চারটির মধ্যে চারটিই, আকবরশাহ মোড়ের তিনটির মধ্যে তিনটি, রাহাত্তারপুল মোড়ের তিনটি, বহদ্দারহাট মোড়ে চারটি, সাগরিকা মোড়ে তিনটি, পিএইচপি স্পিনিং মিলে দুটি, সিটি গেটে একটি, কাপ্তাই রাস্তার মাথায় তিনটি, দেওয়ানহাট ব্রিজে চারটির মধ্যে দুটি, সিইপিজেড মোড়ে চারটির মধ্যে চারটি, অলংকার মোড়ে চারটির মধ্যে চারটি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আটটির মধ্যে দুটি, বড়পোল মোড়ে চারটির মধ্যে চারটি, প্রবর্তক মোড়ে চারটির মধ্যে চারটি, দুই নম্বর গেটে চারটির মধ্যে চারটি, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির দুটির মধ্যে দুটি, অক্সিজেন চেকপোস্টের তিনটির মধ্যে দুটিসহ মোট ৬০টি ক্যামেরা নষ্ট রয়েছে।