সাতকানিয়া থানার রুপকানিয়া মৌজার আর এস ১৬২৮ খতিয়ানে ৫০ ও ৫১ দাগে যথাক্রমে ১৫৪ ও ৭ শতাংশসহ সর্বমোট ১৬১ শতাংশ জমি রাষ্ট্রের বরাদ্ধ মোতাবেক ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় সাতকানিয়া থানা। যার ৫১ দাগের ০৭ শতাংশ পূর্ব দিকে। এই ৫১ দাগের পশ্চিমাংশে একই মৌজার একই খতিয়ানের ৫০ নং দাগের ১৫৪ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সাতকানিয়া থানা ও সাতকানিয়া সার্কেলের প্রশাসনিক এবং আবাসিক ভবন সমূহ। আর এস খতিয়ানে এটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর থানা হিসাবে চিহ্নিত আছে। এই থানার পূর্বাংশে ভোয়ালিয়া পাড়া সাকিন সংলগ্ন। বিগত সত্তর দশকের শেষের দিকে তৎকালীন এক শ্রেণীর দোর্দন্ড প্রতাপশালী জামায়াত নেতাদের সহায়তা ও আশীর্বাদ নিয়ে ভোয়ালিয়া পাড়া সাকিনের জনৈক মদন মিয়া তার সৃজিত কিছু ভূয়া কাগজপত্র দ্বারা সাতকানিয়ার তৎকালীন ১ম মুন্সেফি আদালতে থানা পুলিশের ৫১ দাগের এই ০৭ শতাংশ জায়গা তার নিজের দাবী করে টিএস নং-৮৫/১৯৭৭ মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রতিপক্ষ তৎকালীন সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ বিভাগীয় অনুমতি ও আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উক্ত মামলার জবাব প্রদানের পূর্বেই রাজনৈতিক দাপটে (!) মদন মিয়া অতি দ্রুত এক তরফা ডিক্রি হাসিল করে নেন। উক্ত ডিক্রি রহিতের দাবীতে তৎকালীন অফিসার ইনচার্র্জ সাতকানিয়া থানা মিচ-১১৫/১৯৭৭খ্রিঃ নং মামলা দায়ের করেন। এই মামলা করার পর বিভিন্ন তারিখে শুনানী অন্তে বিগত ৩০.০১.১৯৮০খ্রিঃ তারিখে দোতর্ফা সূত্রে ডিসমিস হয়। অর্থাৎ রায় থানার পক্ষে আসে। এরপর মদন মিয়া চৌধুরী অপর-৮৫/১৯৭৭খ্রিঃ মামলা রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে মাননীয় জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রামে অপর-আপীল-৫৪/১৯৮০খ্রিঃ মামলা দায়ের করেন। উক্ত অপর আপীল-৫৪/১৯৮০খ্রিঃ মামলাটিও বিগত ০৫.০৭.১৯৯৪খ্রিঃ তারিখে ডিসমিস হয় তথা আপীল না-মঞ্জুর হয়। তৎপরবর্তীতে উক্ত মদন মিয়া চৌধুরী অপর আপীল-৫৪/১৯৮০খ্রিঃ মামলার রায় ডিক্রির বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন-৩৬২/১৯৯৪খ্রিঃ মামলা দায়ের করেন। সেখানেও দীর্ঘ শুনানি অন্তে বিগত ০২.০৯.২০১২খ্রিঃ তারিখ দোতরফা সূত্রে মামলাটি খারিজ হয়ে থানা পুলিশের পক্ষে আদেশ হয়।
পরবর্তীতে মদন মিয়া চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে মোঃ ফরিদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী এতদবিষয়ে অবগত থাকা সত্ত্বেও সমস্ত আদেশ গোপন রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারী সম্পত্তি গ্রাস করার কু-উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল হোসেন নাম উল্লেখপূর্বক তাকে বিবাদী করে গত ২১.১১.২০১৭খ্রিঃ তারিখ সিনিয়র সহকারী জজ, সাতকানিয়া আদালতে মিস মামলা নং-৭৫/১৭ দায়ের করেন। যার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল হোসেন তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই জমির ভবনে থাকা বাদীর ভাড়াটিয়াদেরকে জোরপূর্বক বের করে দেন, ভবনের পাকা দেওয়াল ভেঙ্গে নতুন দরজা বানান, বিদ্যুৎ বোর্ডের মিটার খুলে ফেলেন এবং গোটা ভবনের কাঠামো পরিবর্তন করে থানা পুলিশের দখলে নিয়ে উক্ত বাদী মহোদয়ের লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেন।
তার এই দায়েরকৃত মিস মামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম মহোদয়কে বিস্তারিত অবহিত করে তাঁর অনুমতি ও দিক নির্দেশনা নিয়ে অফিসার ইনচার্জ মোঃ রফিকুল হোসেন স্থানীয় আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মুন্সেফ আদালত থেকে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের যাবতীয় আদেশ ও ডিক্রি সমূহ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় সাতকানিয়া আদালতের সিনিয়র আইনজীবীদের মাধ্যমে তার উপযুক্ত প্রমানপত্র সহ সংশ্লিষ্ট আদালতে জবাব প্রদান করেন। এতে নিঃস্বার্থ ভাবে থানার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নিয়োজিত হন সাতকানিয়া আদালতের সিনিয়র আইনজীবী সর্বজনাব মোঃ সোলায়মান হোসেন, মোঃ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, হাফিজুল ইসলাম মানিক, এম শাহাদত হোসেন হিরু, আশীষ কুমার দত্ত, অসীম কুমার পাল, সুজন পালিত, শিব শংকর নাথসহ কমপক্ষে ৩০ জন। যার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ শুনানি অন্তে মৃত মদন মিয়ার ছেলে মোঃ ফরিদ উদ্দিন হাসান চৌধুরীর দায়েরকৃত মিস মামলা নং-৭৫/২০১৭, জনাব মোঃ ইয়াছিন আরাফাত, সিনিয়র সহকারী জজ, সাতকানিয়া আদালত বিস্তারিত গভীর পর্যবেক্ষণ পূর্বক দোতরফা সূত্রে খারিজ করেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশ অদ্য ০৯.১০.২০১৮খ্রিঃ তারিখ সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে জারি হয়। বিজ্ঞ বিচারক তাঁর আদেশের অংশে উল্লেখ করেন যে, সমস্ত বিষয়াদি প্রার্থিক সম্পূর্ণরূপে অবগত আছেন। অথচ আদালতকে ভ্রমে ফেলার কু-উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায় লাভের আশায় অত্র মিস মামলা দায়ের করেন। ফলে আদালতের প্রচুর মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। প্রার্থিকের উদ্দেশ্যমূলক উক্তরূপ আচরণের কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। উক্তরূপ আচরণ আদালত অবমাননার শামিল। শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের খাতিরে প্রার্থিককে উক্তরূপ অন্যায় আচরণের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ হতে অব্যাহতি দেয়া গেল। প্রার্থিকের মামলা অচল ও অরক্ষণীয় মর্মে আদালত কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’’
এই আদেশের মাধ্যমে দীর্ঘ ৪১ বছর পর সাতকানিয়া থানা পুলিশ বিভাগীয় ০৭ শতক রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নিরঙ্কুশ অধিকার ফিরে পায়। স্থানীয়ভাবে আরো জানা যায় যে ১৯৭৭ এর পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে থানার এই নিজস্ব যায়গার স্থাপিত দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় সাবেক একজন জামাতের এমপি‘র তত্ত¡াবধানে ‘মোজাদ্দেদে আল ফেসানি কিন্ডার গার্ঢেন’ এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে ছাত্রশিবির ও জামাতের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।