৩১ জানুয়ারি মধ্যরাতে আলোচনার প্রেক্ষিত তৈরি করলেন তিনি নিজেই। নিজের ফেসবুক ওয়ালে বরের সাজের ছবি পোস্ট করলেন। সেখানে মধ্যবয়সী এক মহিলাকে পা ছুঁয়ে সালাম করার ছবি ছাড়াও বেশ কয়েকটি ছবি দেখা গেছে। এরমধ্যে একটি ছবিতে আছে, বরের সাজে ছোট শিশুদের নিয়ে তিনি মুনাজাত করছেন। অন্য ছবির মধ্যে একটিতে মুরুব্বীশ্রেণীর নারী-পুরুষদের নিয়ে মুনাজাতের ছবি। আরেকটিতে বরের মতো মুখে রুমাল চেপে তিনি বসে আছেন শেরোয়ানি পরে। তবে ফেসবুক ওয়ালের কোন ছবিতেই কনের একক কিংবা নব দম্পতির যৌথ কোন ছবি
ছিল না। ফেসবুকে এসব ছবি যারা দেখেছেন, তারা প্রায় সকলেই বুঝে গেলেন, বর্ণনা দেয়া মধ্যবয়স উত্তীর্ণ লোকটি বিয়ে করেছেন। আর সামাজিক প্রথা অনুযায়ী যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে সকলকে জানান দিতে ফেসবুকের আশ্রয় নিয়েছেন।
এতক্ষণ ধরে যার বিয়ের গল্প, তিনি আর কেউ নন। তিনি হচ্ছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন (উপ পরিচালক) চিরকুমার ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। নানা কারণে চট্টগ্রামের অনেকেই তাকে চিনেন। বিয়ের ছবি দেখে তাই কৌতুহলী লোকের জানার আগ্রহ চাঙা হয়ে ওঠে। তাই তার ফেসবুকে বিয়ের সাজের ছবি দেখে অনেকেই বরকে ফোন করতে শুরু করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ। সন্দেহ চরমে ওঠে। সকলেই ধরে নেন, কুমিল্লার আলোচিত চিরকুমার সভার অন্যতম সদস্য ডা. আজিজুর রহমান অন্তত শেষ বয়সে এসে বিয়ে করার তাগিদ বোধ করেছেন। সংকোচে মুখে হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছেন না, তাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
অবশ্য এরি মধ্যে আজিজুর রহমানের ফেসবুকের কমেন্ট অপশনে অনেকেই অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী চিরকুমার সমিতি আবারও ধাক্কা খেলো। বিয়ে করে সাবেক রেলমন্ত্রী এর আগে চিরকুমার সমিতির সঙ্গে ‘বিশ^াসঘাতকতা’ করেছেন। এবার করলেন ডা. আজিজুর রহমান। সমিতি বোধহয় আর টিকবে না।
১২ ঘণ্টা মোবাইল বন্ধ রাখার পর ফেসবুক বন্ধু আর অস্থির ফলোয়ারদের কৌতুহল মিটাতে অবশেষে দুপুরের দিকে আজিজুর রহমান রহস্য উম্মোচন করলেন। জানালেন বিয়ে নয় এটি ছিল জন্মদিনের অনুষ্ঠান। তাঁর জন্মদিন ১ ফেব্রুয়ারি। ¯্রফে মজা করার জন্য তিনি বিয়ের সাজে সেজেছিলেন। মজা দিতে চেয়েছেন ফেসবুক বন্ধু, ফলোয়ার ও শুভানুধ্যায়ীদের।
১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি জানান, ‘শেষ পর্যন্ত মনের বউ (কুতকুতি বেগম) না আসায় বিয়ের অনুষ্ঠানটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।’
আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাসের প্রথম দিন। আমার জন্মদিন ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সাল। চট্টগ্রামের পশ্চিম মাদারবাড়ি রশিদ মাস্টার লেনের ১১০৫ নং বাড়িতে আমার জন্ম। পশ্চিম মাদারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমার জীবনের প্রথম স্কুল। বাবার চাকরিসূত্রে চট্টগ্রামে কিছুদিন থাকলেও পরবর্তীতে আমরা কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিবিরবাজার ডাকঘরের ঘিলাতলী গ্রামে বড় হই।…. হ্যাপি বার্থ ডে টু মি—- চিরকুমার আজিজ।’
জন্মদিনে কেন বিয়ের সাজ, জানতে চাইলে ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিয়ে তো আর করা হল না। সারা বছরের এই একটি দিন আমি ঘটা করে পালন করি। গত বছর ছিলাম আমেরিকায়। সেখানে বন্ধু-বান্ধবরা নিজেদের উদ্যোগে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেছিলেন। বেশ উৎসবের মেজাজ ছিল অনুষ্ঠানে।’
সিভিল সার্জন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে আমি ‘উপ-পরিচালক’ হয়েছি। নগরীর মুরাদপুর এলাকায় যে খালাম্মার বাসায় থাকি, সেখানে খালাতো ভাইবোন জোর করে ধরলেন, যেনো এবারের জন্মদিন একটু ভিন্নভাবে পালন করি। কারণ পদোন্নতির সুবাদে বদলী হয়ে আগামী বছর কোথায় চলে যাই, সেটারতো ঠিক নেই। খালাম্মাও একই বায়না ধরায় অমত করিনি। বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে তারা সকলে মিলে আমাকে শেরোয়ানি পরতে বললেন। ভাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। বন্ধুদের সঙ্গে মজা করার জন্যই শেরোয়ানি পরা সেই ছবি দিলাম ফেসবুকে। সেই ছবি আর পোস্টে ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে ৮/৯ শ’ লাইক আর কমেন্ট পড়ে। বাকিটাতো আপনারা জানেন।’
বিয়ে না করার কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আসলে বয়সকালে বিয়ে করার একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বলতে পারেন ব্যাটে-বলে হয়নি। এভাবে একসময় দেখলাম, বয়স অনেক হয়ে গেছে। আগ্রহে ভাটা পড়ায় আর করা হয়নি।’
বিয়ে করার আর কোন সম্ভাবনা আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখি। একাকীত্ব জীবন কাটাতে শেষ বয়সে হয়তো করতেও পারি। তবে বিয়ে করার জন্য এতো অস্থির না।’
প্রসঙ্গক্রমে ডা. আজিজুর রহমান বলেন, কেউ তো নেই, তাই অবসর সময় কাটাই ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে। আমার সাতটি ফেসবুক আইডি আছে। এই সাত আইডিতে ৬৬ হাজারের মতো বন্ধু এবং ফলোয়ার রয়েছেন। তাদেরকে মজা দেয়ার মাধ্যমে আমি কিছু ম্যাসেজ দেই অবসর সময়ে ফেসবুকে বসে। দৈনন্দিন আমি চার ধরণের চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে ফুটিয়ে তুলি। প্রথমত: আমি ফেসবুকে ধর্ম আর নৈতিকতার কথা বলি। দ্বিতীয়ত: বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তাঁর আদর্শ প্রচার করি। তৃতীয়ত: সরকারি চাকরি করি এবং পঞ্চমত: নানা ধরণের ফান করে ফেসবুক বন্ধুদের মজা দেয়ার চেষ্টা করি।
উল্লেখ্য, ডা. আজিজুর রহমানের এগার ভাই-বোন। এর মধ্যে পাঁচ ভাইবোন ডাক্তার, একজন প্রকৌশলী ও একজন শিক্ষক। বাবা মোহাম্মদ আনোয়ারুল আজিম সিদ্দিকীর বয়স ৮৭ বছর। মা কাজী খাদিজা বেগম ২০১৫ সালের ২৬ মে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ২০০৮ সালে জাতীয়ভাবে ‘রত্নগর্ভা মা’-এর সম্মাননা পান।