দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পাচ্ছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘স্বাধীনতা’ পদক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রোববার (১০ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১২ জনের নাম ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার দেবেন।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারজয়ীদের দেয়া হয় ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, তিন লাখ টাকার চেক ও একটি সম্মাননাপত্র।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে মরণোত্তর এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এর জন্ম ১৯২২ সালের ৬ জুলাই ভারতের বিহার প্রদেশের পাটনায়। পিতা আবদুল হাদী চৌধুরী চাকরির সূত্রে সেখানেই ছিলেন। পরে ফিরে আসেন চট্টগ্রামে। রাউজান উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের দারোগা বাড়িতে পৈতৃক নিবাস। ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক প্রতিষ্ঠিত ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকার সাথে যুক্ত হয়ে প্রায় ৪৩ বছর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৩ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ১৯৪২ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বিএ শ্রেণিতে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি এই দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মনোনীত প্রার্থী হিসাবে আওয়ামী লীগের হয়ে রাউজান-হাটহাজারী সংসদীয় আসনে নির্বাচনে অংশ নেন এবং ফজলুল কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। ২৬ মার্চ কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় তিনি জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের তথ্য দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে স্বাধীন বাংলা বেতারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। পাশাপাশি মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত ‘জয় বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বৈদেশিক প্রচার দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার গভর্নর নিযুক্ত করেন। বাংলা একাডেমি তার জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১২ জানুয়ারি মিরসরাই উপজেলার ধুম গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬২ সালে স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে লাহোরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন। তার পিতা এস রহমান ১৯৬০ সালের দিকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও ব্যবসায়ী ছিলেন।
১৯৭০ সালে তিনি সর্বপ্রথম তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সেক্টর-১ এর সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।