অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে সে সকল ক্ষতি হতে পারে

আধুনিক জীবনে, সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এবং অনেকেই কারণে বা অকারণে এর অতিরিক্ত ব্যবহার করেন। এমনকি, অনেকে একাধিক মোবাইল ফোন একসঙ্গে ব্যবহার করেন। মোবাইল ফোনের সুবিধা আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বলব না, আমরা মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সৃষ্ট ক্ষতিগুলো নিয়ে কথা বলব।

এখনকার দিনে মোবাইল ছাড়া একমুহূর্ত ভাবা যায় না। সারাক্ষণ এই যন্ত্রটি আমাদের সঙ্গী হয়ে রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে হোক অথবা বিনোদনের ক্ষেত্রে, সবসময়ই এই যন্ত্রটিকে ব্যবহার করে চলেছি আমরা। অফিসের কাজ হোক বা ব্যক্তিগত কাজ-সব ক্ষেত্রেই মোবাইল ফোন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটিকে আমাদের ব্যবহার করতেই হয়। এ ছাড়া, কোনও উপায়ও নেই।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মোবাইল থেকে বের-হওয়া ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের শরীরের নানা উপায়ে ক্ষতি করে। এটা আমরা সবাই জানি। মোবাইলের ক্ষতিকর বিকিরণ ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, সেটাও কারও অজানা নয়। আসুন আমরা জেনে নিই, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে আমাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে।

১. মস্তিষ্কের সমস্যা

র‍্যাডিয়েশন বা বিকিরণ হচ্ছে মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট সবচেয়ে বড় সমস্যা। মোবাইল ফোন কানে লাগিয়ে বেশি কথা বললে আমাদের মস্তিষ্কের কম-বেশি ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মোবাইল ফোন বাম কানে লাগিয়ে কথা বললে ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়। তবে, এক্ষেত্রেও মোবাইল ব্যবহার যত কম করা যায়, তত ভালো।

২. ক্যানসার

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল থেকে বের হওয়া রেডিওফ্রিকোয়েন্সির ফলে ব্রেন টিউমার হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা বেড়ে যায়। এ-থেকে ক্যানসারও হতে পারে।৩. হার্টের সমস্যা

মোবাইল থেকে বের-হওয়া ক্ষতিকর রশ্মি পাকাপাকিভাবে হার্টের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে বুক পকেটে কখনও মোবাইল ফোন রাখবেন না। আর যদি বোঝেন যে, হার্টের কোনো সমস্যা হচ্ছে, তাহলে দেরি না-করে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন।

৪. বন্ধ্যাত্ব

মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার পুরুষদের স্পার্মের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। এতে তাদের প্রজনন-ক্ষমতা কমে যায়। কখনও কখনও তাদের প্রজনন-ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৫. শ্রবণ-দুর্বলতা

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শ্রবণশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মোবাইলের তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের সংস্পর্শে আসার কারণে এমনটা হয়। এতে কানে শোনার ক্ষমতা দিন দিন কমে যেতে পারে।

৬. চোখের সমস্যা

আজকাল অনেকেই মোবাইলে গেমস্‌ খেলেন, চ্যাট করেন, ফেসবুকে সময় কাটান। এর মানে তাদেরকে দীর্ঘক্ষণ একটানা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। মোবাইল ফোনের এ-ধরনের ব্যবহার চোখের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

৭. ঘুমের ব্যাঘাত

কেন রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে বুঝতে পারছেন? মোবাইল নিয়ে সারাদিন পরে থাকাটা এর প্রধান কারণ হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করা, বিশেষ করে রাতে শুয়ে শুয়ে মোবাইল ব্যবহার করা ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে শরীরে নানা ধরনের অসুখ বাসা বাধতে পারে।

৮. দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ায়

মোবাইল ব্যবহার করতে করতে কাজ করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকখানি বেড়ে যায়। গাড়ি চালাতে চালাতে অথবা রাস্তা পার হতে গিয়ে কখনও মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়।

৯. ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সৃষ্ট স্থির বিদ্যুত আমাদের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। কারণ, এ বিদ্যুত স্ক্রিনের সামনে ভাসমান বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতিকর কণা আকর্ষণ করে আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে থাকে। আর যারা বেশিক্ষণ মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাদের তো এ ক্ষতি হবার আশঙ্কা স্বাভাবিকভাবেই বেশি।

১০. মেরুদণ্ডের সমস্যা

মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানে মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকা। এতে আমাদের ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে। আপনার কি মাঝে মাঝে ঘাড়ে ব্যথা হয়? অনেকেই ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে অভিযোগ করে থাকেন। নানান কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার এর মধ্যে অন্যতম। আসলে ঘাড় ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হল ‘সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস’। মেরুদন্ডের ক্ষয়রোগ হল ‘স্পন্ডাইলোসিস’ এবং মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া হল ‘সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস’।