অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে দেশের পর্যটকদের বৃহত্তম দর্শনীয় স্থান চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের লেক। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফরেস্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে এই সাফারী পার্কটির অবস্থান। পার্কের আয়তন পায় ৯০০ হেক্টর। প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত নির্জন উঁচুনিচু টিলা, প্রবাহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জন ও প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ জানা-অজানা গাছ-গাছালি, অপূর্ব উদ্ভিদের সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে এ সাফারী পার্কটি। এ পার্কে রয়েছে বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ, জেব্রা, বানর, ময়ুর, কুমিরসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি যেন প্রাকৃতিক এক অপরূপ সৌন্দয্যের লীলাভূমির সবুজ ছায়ায় ঘেরা। পার্কের অভ্যন্তরে রয়েছে বড় আকারের দুইটি কৃত্রিম হ্রদ। এ হ্রদ দু’টি থেকেই পার্কের বন্যপ্রাণীরা তাদের পিপাসা নিবারন করে থাকে। প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরুতেই এ কৃত্রিম হ্রদ (লেকে) গুলোতে আগমন ঘটে হাজারো অতিথি পাখির। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে সাফারি পার্কের লেক পয়েন্টে। পার্কের লেকজুড়ে হাজারো লাল পদ্মের মাঝে অতিথি পাখির কলকাকলী পার্কে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দের যোগান দিচ্ছে। পার্ক সূত্র জানায়, প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করলে শীত প্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারত থেকে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় অতিথি পাখির আগমন ঘটে তার মধ্যে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক হলো অন্যতম। উড়ে আসা এসব অতিথি পাখির মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, মুরগ্যাধি, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও কামপাখি অন্যতম। এছাড়া মাঝে মধ্যে মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, বামুনিয়া হাঁস, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল ও কাস্তেচাড়াসহ প্রভৃতি পাখির দেখা মিলে এই লেকে। এসব পাখি ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে এ সাফারি পার্কে। গত বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে স্ব-স্ত্রীক ঘুরতে আসা হাটহাজারী এলাকার ওমান প্রবাসী দর্শনার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওমানে ছিলাম। এক সপ্তাহ পূর্বে দেশে আসছি। প্রবাসে থাকার কারণে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তেমন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ছেলে মেয়েদের পড়া-লেখার চাপ কম থাকায় পরিবারের লোকজন নিয়ে ভ্রমনে বের হয়েছি। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ভ্রমনে এসে ছেলে-মেয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছে। পার্কের ভেতরে জেব্রা বেস্টনির পাশে লেক পয়েন্ট এলাকায় অতিথি পাখির উড়া-উড়ি ও কলকাকলী সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরই শীতের মৌসুম আসলে পার্কের অভ্যন্তরীণ লেকগুলোতে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে যখন খুব বেশি শীত পড়ে তখন এ পাখির দেখা মেলে পার্কের লেকে। অতিথি পাখির এ আগমনটা পার্কে আগত দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদনের রূপ দিয়েছে। অতিথি পাখিগুলো এক নজর দেখতে পর্যটকদের ভীড়ও আগের চেয়ে বেড়েছে।