‘টানেল নির্মাণ কাজে আনন্দিত হতেন মহিউদ্দিন চৌধুরী’

পতেঙ্গা সুধী সমাবেশ থেকে: বাংলাদেশের প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গপথ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী খুবই আনন্দিত হতেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বীর চট্টলার গণমানুষের নেতা প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী, তিনি চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। নদীর ওপর ব্রিজ করলে নদীর ক্ষতি হবে। তাই গণমানুষের এই নেতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন। আজ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি থাকলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। বাংলাদেশের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। আজ আমি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নগরের পতেঙ্গায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় মঞ্চে অন্যদের মধ্যে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও ছিলেন। তখন তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়।সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডিটানেল নির্মাণ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, চীন সফরে গেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আলোচনার পর ওইদিনই আমরা চুক্তিতে সই করি। চীন সরকার সাধারণত ঋণের ৮৫ ভাগ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য শতভাগ সহায়তা দিয়েছে তারা। আমাদের আগ্রহ দেখে চীনের প্রধানমন্ত্রী এ সহযোগিতা দিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্টও বেশ সহযোগিতা করেছেন। তাদের সহায়তায় এই মহাযজ্ঞে আমরা প্রবেশ করেছি।

টানেলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানেলের মাধ্যম নদীর তলদেশ দিয়ে নগরের সঙ্গে যুক্ত হবে আনোয়ারা।

‘আনোয়ারা থেকে পটিয়া পর্যন্ত ফোর লেন করে দেয়া হবে। ফলে টানেলটি কক্সবাজারকেও সংযুক্ত করবে। আনোয়ারা, পটিয়া হয়ে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় চোখ মোছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলতিনি বলেন, আমি কাজ করতে চাই দেশের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য- এটাই বড় কথা। আমরা প্রথমবার সরকার গঠনের পরই চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর করা হয়।

‘এবার লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম। ফলে অতি অল্প সময়েই বিমান বন্দরে পৌঁছানো যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল; যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয় তা করে দিয়েছি। চট্টগ্রামবাসীর আর কোনো দুঃখ থাকবে না।

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পোর্টটা (চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর) চালু করেন; এই পোর্টে অনেক মাইন পোতা ছিল। সেগুলো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহায়তায় সরানোর ব্যবস্থা করে পোর্টটাকে সচল করেছিলেন।অল্প সময়েই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে গড়ে তুলেন। কিন্তু তখনই বাঙালির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। নেমে আসে ১৫ আগস্ট।

এর আগে রোববার সকালে দুটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর মোনাজাত ও দোয়ায় অংশ নেন তিনি।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপুর্তমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সচিব সাজ্জাদুল হাসান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন